শনিবার (২৯ জুন ২০২৪) বেলা ১১ টায় নওগাঁ মুক্তির মোড়ে ফিলিস্তিনে গণহত্যায় সমর্থনকারী ইসরাইলি পণ্য বয়কটের দাবীতে মানববন্ধন করে নওগাঁ ইয়ুথ ক্লাব।
নওগাঁ ইয়ুথ ক্লাবের স্বেচ্ছাসেবী নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মো. তারিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ইসরাইলি পণ্য বয়কট করে বিকল্প দেশীয় পণ্য ব্যবহারের দাবী জানানো হয়।
মানবন্ধনে নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী নাকিব আল হাসান বলেন, "গত বছর ৭ অক্টোবর থেকে আপনারা ফিলিস্তিনে দেখছেন ছোট্ট শিশুর চূর্ণ- বিচূর্ণ মাথার খুলি হাতে নিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা মাকে। আপনারা শুনেছেন গর্ভবতী মায়ের পেটের উপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়া ট্যাংকের গর্জন। ১৯৪৮ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে ঘর ছাড়া করা হয়। যা ছিলো ফিলিস্তিনের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। ১৯৬৭ তে দুই লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি শরনার্থীতে পরিণত হয়। ১৯৮২, ২০০৮, ২০২৩ মোটা দাগে নিয়মিত ভাবেই ক্রাইম করে আসছে ইসরাইলি জালেমরা। ইসরায়েলি অপারেশন শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ৩৫ হাজার এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে জাতিসংঘের অনুমান অন্তত ৫৬% নারী ও শিশু। আরো ১০ হাজার নিখোঁজ এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে বলে ধারণা করা হয়। স্ট্রিপের ২.৩ মিলিয়ন ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার প্রায় পুরোটাই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এরকম নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ইসরাইলকে সর্বাত্মক বয়কট করা এখন সময়ের দাবী।"
নওগাঁ ইয়ুথ ক্লাবের সদস্য মো. নাহিদ হাসান বলেন, "ইসরাইলে অবৈধ দখলদার জায়নিস্টদের বসতি গড়ার পেছনে ব্রিটেনের হাত ছিলো। আর এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে ফিলিস্তিনে চালানো হচ্ছে গণহত্যা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৪ সাল থেকে ইসরায়েলের আলোচিত আয়রন ডোমেরও উৎপাদন অংশীদার ছিল। মার্কিন সরকারের সেই সুপরিচিত বিবৃতির কথা তো আমরা জানি, যে- "Israel has the rights to defend itself." হ্যাঁ, আমরাও অবশ্যই একমত। কিন্তু ইসরাইল তার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে প্যালেস্টিনিয়ানদের উপর যা করে আসছে তা কখনোই ডিফেন্সের মধ্যে পড়েনা। বরং তা নির্মম গণহত্যা। পৃথিবীর মুক্তিকামী মজলুম জনতার পক্ষে, সকল জালেমের বিরুদ্ধে আমরা বিদ্রোহ ঘোষণা করছি। আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্য থেকে সকল ইসরাইলি পণ্য বয়কট করে দেশীয় পণ্য ব্যবহারের আহবান জানাচ্ছি।"
মো. রবিউল সরদার বলেন, "১৯৬৬ সাল থেকে কোকাকোলা ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক। ২০০৯ সালে কোকাকোলা তাদের বিশ্ব সদর দফতরে গণহত্যা চালানো ইসরাইলি যুদ্ধপরাধী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বিন ইয়ামিন বেন এলিজারকে সম্মননা প্রদান করে। কোকাকোলার ইজরায়েলে করা কিছু নিঃসংস অনুদানের গল্প আপনাদের শুনাতে চাই। ২০০২ সালে ইজরায়েলের Bnei Brak থেকে কোকাকোলা তাদের প্লান্ট ফিলিস্তিনের Qiryat Gat শহরে স্থানান্তর করার জন্য ইজরাইলকে মিলিয়ন ডলার দিয়ে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে এবং সেই প্লান্টে কাজ করবে শুধু ইজরাইলিরা। কোকাকোলা ইসরায়েল ওরফে সেন্ট্রাল বটলিং কোম্পানি ৫০০০ ইসরাইলিকে চাকরি দিয়েছে। কোকা-কোলা কোম্পানির প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহতার কেন্ট, জুন ২০০৮ সালে তেল আবিবে ইসরায়েল ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে ইসরায়েলের জন্য কোকা কোলার বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রকাশ করেন আর যেকোনো উপযুক্ত বিনিয়োগের জন্য "একটি ব্ল্যাংক চেক" প্রদান করেন। ২০০৯ সালের আগস্টে কোকাকোলা কম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুথার কেন্ট তেল আবিবের এক সম্মেলনে ইজরাইল সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মির কে মহান নেতা বলে প্রশংসা করে। আর এই গোল্ডা মির ই বলেছিল - ফিলিস্তিনি জনগণ বলতে কিছু নেই। ২০০৯ সালে জাতিসংঘ আহ্বান করে অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতির জন্য। আর এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করার জন্য এবং গাজায় ইসরায়েলের সামরিক হামলার ধারাবাহিকতাকে সমর্থন করার জন্য কোকাকোলা সরাসরিভাবে অবদান রাখে। এতো কিছুর পরও আমরা কি এখনও আমাদের ভাইদের রক্ত দিয়ে আমাদের তৃষ্ণা মেটাবো?"
মানবন্ধনের সভাপতি মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, "পৃথিবীর মজলুম জনতার পক্ষে খুব বেশি কিছু করার সামর্থ্য হয় তো আমাদের নাই। তবে, সামান্য বয়কটও হতে পারে একটি কার্যকরী অস্ত্র। ফাস্ট ফুড জায়ান্ট "ম্যাকডোনাল্ডস" এর ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে বয়কটের কারণে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত, ইসরায়েলে বোতলজাত প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য আরব লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে কোককে বয়কট করেছিল। ২০২৩ সালে তুরস্কে বয়কটের প্রভাবে ২২ শতাংশ বিক্রি কমেছে। অন্যদিকে মিশরে বয়কটের প্রভাবে ১০০ বছরের পুরনো "স্পিরো স্পাথিস" নামক ব্র্যান্ডের বিক্রয় ব্যাপক বেড়েছে। স্থানীয় মিডিয়া রিপোর্ট বলছে, গাজা যুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশে কোকাকোলার বিক্রি প্রায় ২৩ শতাংশ কমেছে। মালয়েশিয়াতে বয়কটের প্রভাবে এর ১০৮ টি আউটলেট বন্ধ হয়ে যায়। ইকোনমিক টাইমস এর একটি রিপোর্টে তারা বলে, বয়কটের প্রভাবে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড “স্টারবাকস” দুর্বল বিক্রয়ের কারণে প্রায় ১১ বিলিয়ন ইউএস ডলার হারিয়েছে, যার ফলে কোম্পানির মোট মূল্যের ৯.৪ শতাংশ উধাও হয়ে যায়। তাই, বয়কটকে হালকা ভাবে নেওয়ার কিছুর নাই। আমাদের ওয়েবসাইট NaogaonYouth ডটকমে ইসরাইলি পণ্য ও বিকল্প দেশী পণ্যের তালিকা পাবেন। কোকোকোলা, পেপসিকো, নেসলে সহ সকল ইজরাইলি পণ্যকে বয়কট করা এখন সময়ের দাবী। বিকল্প হিসেবে আমরা দেশীয় পণ্য ব্যবহার করবো। দেশের অর্থনীতি ও স্থানীয় উদ্যোগকে চাঙ্গা করবো। আমরা সবাই একজোট হলে পরিবর্তন আনা সম্ভব, ইনশাআল্লাহ।"
মানবন্ধনে নওগাঁ ইয়ুথ ক্লাবের তরুণরা পণ্য বয়কটের কারণ ও ফিলিস্তিনে গণহত্যার নির্মমতার বিবরণ সংবলিত বিভিন্ন ফেস্টুন হাতে নিয়ে দাঁড়ায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন