ইসলামপন্থিদের অনুষ্ঠান কিংবা বক্তব্য মিডিয়াতে প্রচারে করণীয় | মনযূরুল হক
ঘুমের আগে একটা কথা বলে যাই। ইসলামপন্থিদের অনুষ্ঠান কিংবা বক্তব্য মিডিয়াতে প্রচার না পাওয়া, বা পেলেও ভুল উপস্থাপন নিয়ে আক্ষেপ বেশুমার। এজন্য কেউ কেউ নিজেদের মিডিয়া করার কথাও বলেন। সমস্যা এবং সমাধানের যে প্রস্তাব, দুইটাই ভুল।
মিডিয়াতে বক্তব্য প্রচারের একটা নিয়মতান্ত্রিক প্র্যাকটিস আছে। সেটা ফলো না করে নিজেদের মতো খামখেয়ালি করে গেলে ধরা খাওয়া স্বাভাবিক। প্রসেসটা কী, সংক্ষেপে বলি:
অনুষ্ঠানের আগে নির্দিষ্ট বিটের সাংবাদিকদের জানাতে হয়। সবচেয়ে ভালো হয়, বার্তা সম্পাদককে ইনফর্ম করা এবং ক্যামেরা ম্যান ও সাংবাদিককে যথা সময়ে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা। কেন এই অনুষ্ঠানের সংবাদ জরুরি, সেটা তাকে বুঝিয়ে বলা। তার হাউস থেকে কে আসবেন, তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা, যেন তিনি নতুন লোকজনের কাছে গিয়ে নিজেকে অনাহুত না ভাবেন।
বার্তা সম্পাদক বা হাউসকে নিউজ কভার করার অনুরোধ অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের প্যাডে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সিল-সাক্ষরসহ হতে হয়। অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের জন্য ভিন্ন আসনের ব্যবস্থা রাখলে ভালো হয়। অনুষ্ঠান শেষে প্রেস রিলিজ সরবরাহ করকে হয়। নিজেদের উদ্যোগে তাদের ফুটেজ, ছবি ও সফট কপি দেওয়া এবং সংবাদ প্রচারের পরে তাকে ধন্যবাদ জানানো স্মার্ট প্র্যাকটিস। যারা আসতে পারেন নি, তাদেরকেও নিউজ সরবরাহ করা দরকার।
ভুল করলে তাদের আবার জানাতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিবাদ লিপি পাঠাতে হবে।
উপরের এই কাজগুলো ইসলামপন্থিদের ১ শতাংশও করেন না নিশ্চিত। আমি নিজে বহুজনকে বুঝিয়ে বলার পরও, এমনকি নির্দিষ্ট বিটের সাংবাদিকদের ফোন নম্বরসহ লিস্ট ধরিয়ে দেওয়ার পরেও দেখি না এটা প্র্যাকটিস করতে। যারা দুয়েকজন করেছেন, একজনও বলতে পারবেন না যে তারা কভারেজ পান নাই।
সবাই শুধু হাহাকার করেন, আর বলেন, ইসলাম বলেই এমন একটা অনুষ্ঠানের সংবাদ তারা দিলেন না। ভাই, আপনার অনুষ্ঠানের খবর কি ওহির মাধ্যমে পৌঁছে সবখানে? আপনি যেই প্রতিষ্ঠানের কর্তাও তো আপনাকে আদর করে না বললে কোথাও যেতে চান না।
অনেকে শুধু পোস্টার পাঠিয়ে দেন, কেউ সাদা পৃষ্ঠায় লিখে দেন, কেউ একটা অডিও ভয়েজ দিয়ে বলেন, ভাইজান আপনি একটু গুছিয়ে লিখে দেন, উম্মাহর ফায়দা হবে। দাঁত কামড়ে নিজে লিখে বিভিন্ন মিডিয়ার বন্ধুদের অনুরোধ করে করে সংবাদের ব্যবস্থা করেছি বহুবার। কিন্তু এটা বুঝতে বাকি নাই যে, এই কমিউনিটি মিডিয়াকে কী পরিমাণে অবহেলা করে আবার সেটা স্বীকার না করে সম্মানজনক কভারেজ চায়।
রকমারিতে সাধারণ একটা শায়েস্তা খাঁ অফারও আমরা ১০ থেকে ২০ টা সংবাদ মাধ্যমে ছাপিয়ে এনেছি। যদিও সেই সংবাদটা পৌঁছাতে হয়েছে অন্ততঃ ১০০ মাধ্যমে। ভাই বেরাদর সাংবাদিক যারা আছেন, নিয়মিত তাদের আবার কী কী ভাবে সহযোগিতা করা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়েছে। বিভিন্ন কর্পোরেট হাউসে মৌসুমী ফল বা উপহারও পাঠান সাংবাদিকদের।
শোনেন, দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে একটি সুস্থ সম্পর্ক তৈরি করা অসম্ভব না। বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার মতো প্রতিটি সম্পর্কেরই যত্ন নিতে হয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা মানেই তাকে অন্যায় আবদার মানতে বলা নয়, বরং যোগাযোগ নিয়মিত রাখার একটা পেশাদার কৌশল মাত্র।
এসব বিবেচনা না করে নিজেদের মতো করে স্বতন্ত্র মিডিয়া গড়া মানে আসলে আরেকটা মাদরাসা করা ছাড়া কিছুই না। মিডিয়া হতে হবে সার্বজনীন, উন্মুক্ত পাঠাগারের মতন। নইলে তা বিশেষ শ্রেণির মুখপত্র হবে, মিডিয়া না। মাসিক রহমত থেকে দৈনিক রহমত হবে, মিডিয়া হবে না। দেশে যদি এফডিসি থাকে, দেশের সংবাদ মাধ্যমেও নায়ক নায়িকা থাকবে, উদাহরণ হিসেবে বললাম। নইলে সর্বোচ্চ আওয়ামী লীগের জনকণ্ঠ হবে, বিএনপির দিনকাল হবে, জামায়াতের সংগ্রাম হবে, যা দলীয় লোকজন আত্মপ্রসাদের জন্য পড়বে, সংবাদ জানার জন্য না। তার কোনও সামাজিক প্রভাবও থাকবে না। তার চেয়ে না করা ভালো।
মিডিয়াতে নিজেদের চিন্তা ঢুকানোর জন্য মিডিয়াতে নিজেদের লোক লাগে। সেই লোক তৈরির জন্য ঝুঁকি নেওয়া লাগে। ত্যাগ লাগে। একজন ব্যারিস্টার তাজুল বানাতে জামায়াতের কত বছর লেগেছে? ফলে সে যুদ্ধপরাধের বিচারের মতো কঠিন সময়ে দলের পক্ষে লড়েছে। কিন্তু শেষমেশ সে-ও দল ছেড়ে গেছে এবং সেই ‘যুদ্ধাপরাধী‘র আইনজীবী থেকে এখন হয়েছে রাষ্ট্রের চিফ প্রসিকিউটর। তো, এখন কি জামায়াত নতুন করে আইনজীবী বানানো বন্ধ করে দেবে?
এই সব কথা শুধু তাদের জন্য, যারা প্রচারকে জরুরি মনে করেন, দাওয়াতি কাজ মনে করেন। যারা মনে করেন, এসবের দরকার নাই, তাদের কাছে দুঃখিত। আল্লাহ সবাইকে বোঝার তাওফিক দিন।
إرسال تعليق